অ্যাডোবি’র সকল প্রোডাক্ট এর পরিচিতি [১ম পর্ব]

 

অ্যাডোবিবর্তমান যুগের জন্য পরিচিত একটি নাম যা আমরা কম বেশি সবাই শুনে থাকি। আমাদের সবার পিসিতেই কম বেশি অ্যাডোবি’র সফটওয়্যার আছে তার মধ্যে – ইবুক রিডার, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর এগুলো কমন বা এগুলোই আমরা বেশি চিনে থাকি। কিন্তু এগুলোর বাইরে অ্যাডোবি’র আরো ৫০+ প্রোডাক্ট আছে, যেগুলো আমরা ভালো করে চিনি না বা নাম জানলেও সঠিকভাবে তার কার্যকারিতা জানি না। এই ব্লগে আমরা অ্যাডোবি’র ৫০+ প্রোডাক্ট এবং তার পরিচিতি এবং কাজ সম্পর্কে জানব।

প্রথমেই জানব অ্যাডোবি সম্পর্কে। অ্যাডোবি একটি আমেরিকান সফটওয়্যার কোম্পানি। এটি অফিশিয়ালি Adobe Systems নামে পরিচিত। কোম্পানিটি তার মাল্টিমিডিয়া এবং ক্রিয়েটভ সফটওয়্যার পণ্যের জন্য বিখ্যাত। অ্যাডোবি’র জনপ্রিয় সফটওয়্যার গুলোর মধ্যে রয়েছে ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, লাইটরুম, আফটার ইফেক্ট, অ্যাক্রোব্যাট রিডার সহ অনেক গুলো জনপ্রিয় সফটওয়্যার।
কোম্পানিটি জন ওয়ার্নক এবং চার্লস গেসকে দ্বারা প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৮২ সালে এবং এর বর্তমান হ্যাড অফিস ক্যালিফোর্নিয়ার সান জোসেতে। অ্যাডোবি প্রথমে বাজারে আসে ডিজাটাল ফন্ট নিয়ে ১৯৮০ -এর দশকে ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম এর জন্য। অ্যাডোবি’র প্রথম অফিশিয়াল ভোক্তা পণ্য ছিল অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর যা কি না একটি ভেক্টর ভিত্তিক গ্রাফিক্স সফটওয়্যার (আমরা নিচে অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি) ২০২২ সাথে এসে অ্যাডোবি’র বর্তমান গ্রোবাল কর্মচারীর সংখ্যা ২৬,০০০+




Adobe Photoshop:

প্রথমেই আমরা ফটোশপ সম্পর্কে জানব। এটি অ্যাডোবি’র জনপ্রিয় প্রোডাক্ট গুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি ফটো মেনুপুলেশন এর জন্য পৃথিবী ব্যাপী সবার প্রথম পছন্দ। ফটোশপ অনেক গুলো পাওয়ারফুল ইমেজ এডিটিং টুল এর সমন্বয়ে তৈরী যা দিয়ে পোষ্টার, ব্যানার, ওয়েলপ্যাপার, ডিজিটাল আর্টওয়ার্ক এর কাজ করা হয়। ফটোগ্রাফারাও এটি ব্যপক হারে ব্যবহার করে থাকে তাদের ফটো গুলোকে রিটাচ দেওয়ার জন্য। সেই সাথে ইউটিউবাররা তাদের ভিডিওর থাম্বলেন বানানোর জন্য ফটোশপ ব্যবহার করে থাকে।


Adobe illustrator:

এটাও অনেকটা ফটোশপ এর কাছাকাছি সফটওয়্যার। অনেকেই ফটোশপ আর ইলাস্ট্রেটর এর মধ্যে সঠিক পার্থক্য বুঝতে পারে না। এই দুই সফটওয়্যার এর মূল পার্থক্য হচ্ছে – ফটোশপ কাজ করে রাস্টার ইমেজ নিয়ে অর্থাৎ এটার কাজ গুলো পিক্সেল আকারে সংরক্ষিত হয়। আর ইলাস্ট্রট্র কাজ করে ভেক্টর আর্ট নিয়ে অর্থাৎ এটার আর্টওয়ার্ক গুলো সংরক্ষিত হয় গাণিতিক হিসেবে, আনুপাতিক নিয়মে – যার ফলে ডিজাইন টি যত বড় ইচ্ছা সাইজে নেওয়া যায় ছবির কোনরূপ ড্যামেজ হবে না। কিন্তু রাস্টার ইমেজ নির্দিস্ট সাইজের পর ফেটে যাবে বা ড্যামেজ হয়ে যাবে। ইলাস্ট্রেটর আইকন, লোগো, পোস্টার তৈরীর জন্য ব্যপক হারে ব্যবহার করা হয়।


Adobe Lightroom:

এটি ছবিতে ব্রাইটনেস, কালার কারেকশন এবং ফিল্টার যুক্ত করার জন্য ব্যবহার হয়। যদিও এই কাজ গুলো ফটোশপে ও করা যায় কিন্তু লাইট রুমে এক সাথে অনেক গুলো ছবি নিজে কাজ করা যায়। প্রফেশনাল ফটোগ্রাফাররা এডবি লাইটরুম কে ফটো মেনেজম্যান্ট সিস্টেম হিসেবে ইউজ করে যাতে ফটো ক্যাটালগ, অর্গানাইজিং, পোস্ট প্রসেসিং সহজেই করতে পারে হাজার ফটো একসাথে।


Adobe InDesign:

এই সফটওয়্যার টি অ্যাডোবি বাজারে আনে ১৯৯৯ সালে। ইন-ডিজাইন অধিক পেইজ বা লেয়ার যুক্ত ডিজাইনের কাজে ব্যবহার হয় যেমনঃ বই, নিউজ প্যাপার, ম্যাগাজিন। এই সফটওয়্যার এ এক সাথে অনেক গুলা পেইজ ইডিট করা যায়, অনেক গুলা টেক্সট এবং ছবি নিয়ে কাজ করা যায় সুবিধাজনক উপায়ে এই সফটওয়্যার থেকে সরাসরি প্রিন্ট ও করা যায়।


Adobe InCopy:

এই সফটওয়্যার টি ও অ্যাডোবি বাজারে আনে ১৯৯৯ সালে। ইন-কপি মূলত ইন-ডিজাইনের কাজকে সহজ করে। একই জিজাইনের উপর যখন একাধিক এডিট্র কাজ করতে চায় তখন ইন-কপি সফটওয়্যার এর ব্যবহার হয়। এটি ইউজ করে একটি ডিজাইনের উপর একাধিক এডিট্র এক সাথে কাজ করে থাকে। ম্যাগাজিন, নিউজ প্যাপার ডিজাইনে এটির ব্যবহার বেশি দেখা যায়।


Adobe Bridge:

এটি অনেকটা ফাইল ম্যানেজারের মত কাজ করে। এটা যেহেতু অ্যাডোবি’র প্রোডাক্ট তাই এটি দিয়ে এডবির ক্রিয়েটিভ ফাইল গুলো ভিউ করা যায় এবং ম্যানেজ করা যায়।


Adobe Premiere Pro:

এটি একটি টাইম-লাইন বেইজড ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার। অ্যাডোবি এই সফটওয়্যারটি বাজারে আনে ২০০৩ সালে। এটি মুলত Adobe Premiere এর আপডেট রূপ যা বাজারে এসেছিল ১৯৯১ সালে। এটি ইউটিউবার থেকে মুভি মেকার সবাই ইউজ করে থাকে। অসংখ্য ফুটেজ এক সাথে কাট এডিট স্ট্রিম করা সম্ভব। এতে ভিডিওতে যুক্ত করার জন্য রর‍্যেছে অসংখ্য ইফেক্টস।


Adobe After Effects:

ভিজুয়াল ইফেক্টস এর কাজ করা হয় এই সফটওয়্যার এ। এটিকে এক কথায় ভিডিওর ফটোশপ বলা যায়। এই সফটওয়্যার দিয়েই ভিডিওতে বিভিন্ন রকম এনিমেশন, মোশন গ্রাফিক্স, হাজারো সিনেমেটিক ইফেক্টস এড করা হয়। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, যদি আফটার ইফেক্ট দিয়ে ভিডিও এডিট করা যায় তাহলে প্রিমিয়ার প্রো’র কেন প্রয়োজন ??? এর উত্তর হচ্ছে, আফটার ইফেক্ট এ একসাথে বা একবারে শুধুমাত্র একটি ভিডিও নিয়ে কাজ করা যায় এটিকে ফাইনাল সিকুয়েন্স তৈরীর উপযোগী করে বানানো হয় নি তাই ফাইনাল টাচ দেওয়ার জন্য প্রিমিয়ার প্রো তে এক্সপোর্ট করতে হবে।


Adobe Media Encoder:

এটি ভিডিও রেন্ডারের জন্য ব্যবহার করা হয় বিশেষত আফটার ইফেক্ট ও প্রিমিয়ার প্রো এর জন্য। যার ফলে সময় বাচে এবং রেন্ডার চলাকালীন সময় অন্য ভিডিও এডিট করা যায় আবার রেন্ডার করতে গেলে দেখা যায় ফাইলটি অনেক বড় হয়ে যায় কিন্তু মিডিয়া এনকোডার এর দ্বারা করা রেন্ডারে ফাইলের সাইজ অনেক ছোট হয়ে আসে।


Adobe Prelude:

পোস্ট প্রোডাকশন এর পূর্বে বড় সাইজের ফুটেজকে কাট ছাট করে অতিরিক্ত অংশকে বাদ দিতে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় যাতে অতিরিক্ত ফুটেজ নিয়ে এডিট এর সমস্যায় পড়তে না হয়।


Adobe Audition:

এটা প্রিলিওর অডিও ভার্সন। এটাতে ফুটেজের অডিও কে নেক্সট লেবেলের এডিট করা হয় এবং এডিট করার পর ফাইলটিকে ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার এ এক্সপোর্ট করা যায়।


Adobe Flash Professional:

নরমাল টু ডি এনিমেশন, গেইম ও এপ্লিকেশন তৈরীর কাজে এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা হয়। খেয়াল করলে দেখব অনেক সময় অনেক এনিমেশন, গেইম বা এপ্লিকেশন ইউজ করার সময় পিসিতে অ্যাডোবি ফ্লাশ প্লেয়ার ইন্সটল করার নটিফিকেশন আসে এবং যদি আমরা অ্যাডোবি ফ্ল্যাশ প্লেয়ার ইন্সটল না করি তাহলে উক্ত এনিমেশন, গেইম বা এপ্লিকেশন ওপেন হয় না বা প্লে হয় না। এই সব এনিমেশন, গেইম বা এপ্লিকেশন গুলো Adobe Flash Professional দিয়েই বানানো হয়।


Adobe Flash Bulder:

এটিও গেইম এবং এপ্লিকেশন তৈরীর কাজে ব্যবহার করা হয়। যদিও এটিতে পোগ্রামিং এর উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।


Adobe Scout:

অ্যাডোবি ফ্লাশ দিয়ে তৈরী গেইম এপ্লিকেশন গুলোর পারফরমেন্স চেক করা হয় এই সফটওয়্যার দিয়ে।


Adobe Animate:

এটি মূলত অ্যাডোবি ফ্লাশ এর আপডেটেড ভার্সন। এইচ টি এম এল ফাইভ এর মত আপডেটেট ল্যাংগুয়েজ আসার কারনে অ্যাডোবি ফ্লাশ অফিশিয়ালি বন্ধ হয়ে গিয়েছে ২০২০ এ। সেটি নাম পরিবর্তন করে অ্যাডোবি এনিমেট নামে বাজারে আসে। এটিতে করা এনিমেশন গুলো এইচ টি এম এল ফাইভ সহ বিভিন্ন ফরম্যাটে এ এক্সপোর্ট করা যাবে।


Adobe Air:

এটি অ্যাডোবি এনিমেট এর পোস্ট প্লাটফর্ম টেকনোলজি। এটি গেইমস এবং এপ্লিকেশন গুলোকে একাধিক অপারেটিং সিস্টেম এর উপযোগী করে তৈরী করে।


Adobe Character Animator:

ফ্রেম বাই ফ্রেম এডিট না করে টু ডি এনিমেশন ডিভিও তৈরী করা যায় এই সফটওয়ার এর সাহায্যে। ওয়েব ক্যাম ভিডিও থেকে ফ্যাসিয়াল এক্সপ্রেশন কপি করে এনিমেশন ভিভিও তৈরী করা যায়।

Read More....

Post a Comment

Previous Post Next Post